যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত বর্ধিত শুল্ক পাকিস্তানের রপ্তানি খাতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ শেষে এই শুল্ক কার্যকর হলে হুমকির মুখে পড়বে পাকিস্তানের ১৪০ কোটি ডলারের রপ্তানি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের টেক্সটাইল খাত। আর সেই সুযোগে বাজার দখল করতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলো।
সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস (পিআইডিই)। তারা সতর্ক করে বলেছে, পাকিস্তানের বাণিজ্য দিগন্তে ঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। প্রস্তাবিত এই ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ব্যবস্থা পাকিস্তানের রপ্তানি খাতকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার প্রভাবে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক চাকরি হারানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে সংকট।
‘ইম্প্যাক্ট অব ইউনিল্যাটারাল ট্যারিফ ইনক্রিজ বাই ইউনাইটেড স্টেটস অন পাকিস্তানি এক্সপোর্টস’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে বিদ্যমান ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মোস্ট ফেভরড নেশন (এমএফএন) শুল্কসহ মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে রপ্তানি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি বছরে ১১০ থেকে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে টেক্সটাইল খাত।২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৩০ কোটি ডলার, যার বেশিরভাগই ছিল টেক্সটাইল ও পোশাকপণ্য। এ খাতে এরই মধ্যে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত রয়েছে।
পিআইডিই বলছে, নতুন শুল্ক কার্যকর হলে পাকিস্তানের মূল্য প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে কমে যাবে, যার ফলে ভারত ও বাংলাদেশ বাজার দখল করে নিতে পারে।প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিশাত মিলস ও ইন্টারলুপের মতো প্রধান রপ্তানিকারকরা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হতে পারে, ফলে পাঁচ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে। শুধু টেক্সটাইল নয়, চামড়া, চাল, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও খেলাধুলার সামগ্রীর মতো অন্যান্য রপ্তানিও ঝুঁকিতে পড়বে।
এই সংকটকে সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছে পিআইডিই। স্বল্পমেয়াদে কূটনৈতিক পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছে তারা। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে ১৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের তুলা রপ্তানি করেছে, যা এখন হুমকির মুখে।পারস্পরিক আলোচনা সহজ করতে পাকিস্তান নিজেও কিছু মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমাতে পারে, যেমন- যন্ত্রপাতি, স্ক্র্যাপ লোহা এবং জ্বালানি তেল। এছাড়া, মার্কিন তুলা ও সুতা ব্যবহার বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মূল্য শৃঙ্খল রক্ষা করে ছাড়পত্র পাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।
পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি পণ্য ও বাজারে বৈচিত্র্য আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, আসিয়ান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো বিকাশমান বাজারে আইটি, হালাল খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং খেলাধুলার সামগ্রী রপ্তানিতে পাকিস্তানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।এছাড়া জ্বালানি ও পরিবহন খরচ হ্রাস, নিয়মনীতির সরলীকরণ, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি গ্রহণে উৎসাহ প্রদান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৃষি, প্রযুক্তি, জ্বালানি ও মূল্য সংযোজন ভিত্তিক শিল্পখাতে অংশীদারত্ব গড়ার আহ্বান জানিয়েছে পিআইডিই।